1. banglahost.net@gmail.com : rahad :
  2. dainikrahbar@gmail.com : jahangir :
মঙ্গলবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:৫২ পূর্বাহ্ন
আসসালামু আলাইকুম
রাহবার পরিবারে আপনাকে স্বাগতম

সঠিক নিয়মে কোরবানি

মুহাম্মদ আলা উদ্দিন
  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ৭ জুন, ২০২৪
  • ১৯৫ বার পঠিত

মুহাম্মদ আলা উদ্দিন

কোরবানি কি:
কোরবানি ইসলামি শরিয়তের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। আল্লাহ তাআলা বলেন-‘আপনি আপনার রবের উদ্দেশ্যে নামাজ পড়ুন এবং কোরবানি করুন।’ (সুরা কাউসার: ২)
কোরবানির আভিধানিক অর্থ হলো কাছে যাওয়া বা নৈকট্য অর্জন করা। ইসলামি পরিভাষায় কোরবানি মানে হলো জিলহজ মাসের ১০ তারিখ সকাল থেকে ১২ তারিখ সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে শরিয়তের বিধান অনুসারে নির্দিষ্ট পশু জবাই করা।

কোরবানি ওয়াজিব হওয়ার শর্ত:
স্বাভাবিক জ্ঞানসম্পন্ন, প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিম যদি কোরবানি ঈদের তিন দিন অর্থাৎ ১০ জিলহজ সকাল থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত এর মধ্যে সাহেবে নিসাব যার মানে হলো সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপা অথবা এর যেকোনো একটির মূল্যের সমপরিমাণ নগদ অর্থ বা ব্যবসার পণ্যের মালিক থাকেন বা হন, তার জন্য কোরবানি করা ওয়াজিব । সাহেবে নিসাব তথা সামর্থ্যবান ব্যক্তির হাতে নগদ অর্থ না থাকলে আপাতত ধার করে হলেও ওয়াজিব কোরবানি আদায় করতে হবে।

কোরবানির পশুর শরিক:
ছাগল, ভেড়া, দুম্বা কেবল একজনের পক্ষ থেকে কোরবানি করা যাবে। এমন একটি পশু দুই বা ততোধিক ব্যক্তি মিলে কোরবানি করলে কারোর কোরবানিই সহিহ হবে না। আর উট, গরু, মহিষে সর্বোচ্চ সাতজন শরিক হতে পারবে। সাতের অধিক শরিক হলে কারোর কোরবানিই সহিহ হবে না। (কাজিখান : ৩/৩৪৯; বাদায়েউস সানায়ে : ৪/২০৭-২০৮)।

কোরবানির পশুর বয়স:
কোরবানির জন্য ছাগল, ভেড়া ও দুম্বার বয়স এক বছর হতে হয়। গরু ও মহিষের বয়স দুই বছর এবং উটের বয়স পাঁচ বছর হতে হবে। দুম্বার এক বছর পূর্ণ না হলেও যদি এক বছরের মতো হৃষ্টপুষ্ট হয় তাহলে চলবে। উল্লিখিত পশুগুলো নর বা মাদি যা-ই হোক না, তা দ্বারা কোরবানি করতে কোনো বাধা নেই। কোরবানির পশু তরতাজা ও হৃষ্টপুষ্ট হওয়া উত্তম।

পশুর মধ্যে যেসব ত্রুটি থাকলে কোরবানি দেয়া যাবে না:
কোরবানির পশু বড় ধরনের দোষত্রুটি থেকে মুক্ত হতে হবে। হাদিসে এসেছে, চার ধরনের পশু, দিয়ে কোরবানি জায়েজ হবে না। সেগুলো হলো অন্ধ, রোগাক্রান্ত, পঙ্গু ও যার কোনো অঙ্গ ভেঙে গেছে (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩১৪৪)।
১. দৃষ্টিশক্তি না থাকা।  ২.শ্রবণশক্তি না থাকা।  ৩. অত্যন্ত দুর্বল ও জীর্ণ-শীর্ণ হওয়া।  ৪. এই পরিমাণ লেংড়া যে জবাই করার স্থান পর্যন্ত হেঁটে যেতে অক্ষম। ৫. লেজের বেশির ভাগ অংশ কাটা। ৬. জন্মগতভাবে কান না থাকা। ৭. কানের বেশির ভাগ কাটা। ৮.গোড়াসহ শিং উপড়ে যাওয়া। ৯. পাগল হওয়ার কারণে ঘাস-পানি ঠিকমতো না খাওয়া। ১০. বেশির ভাগ দাঁত না থাকা। ১১.
রোগের কারণে স্তনের দুধ শুকিয়ে যাওয়া। ১২. ছাগলের দুটি দুধের যেকোনো একটি কাটা। ১৩. গরু বা মহিষের চারটি দুধের যেকোনো দুটি কাটা।

কোরবানির পশু জবাইয়ের নিয়ম:
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) কোরবানির আগে ছুরি ধারালো করতে এবং তা পশুর দৃষ্টির অগোচরে রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন।’ ছুরি পশুর সামনে আনলে পশু ভয় পেয়ে যায়। এটি পশুকে কষ্ট দেওয়ারও শামিল। ‘তোমাদের কেউ জবাই করার সময় যেন তা দ্রুত সম্পন্ন করে (যাতে পশু অধিক পরিমাণে কষ্ট না পায়)।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩১৭২)। রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, ‘তোমরা যখন জবাই করবে, কষ্ট না দিয়ে জবাই করো, আর তোমাদের ছুরিগুলো খুব ভালোভাবে ধারালো করে নাও, যাতে তোমরা তোমাদের জবাইকৃত পশুকে আরাম দিতে পারো।’ (সহীহ মুসলিম)।
পশু জবাই করার সময় ‘বিসমিল্লাহ’ বলে ছুরি চালানো শুরু করতে হবে। কোরবানির পশু এমনভাবে জবাই করা যাবে না, যার ফলে গলা পুরোপুরি আলাদা হয়ে যায়। পশু জবাই করার সময় একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে যে, পশুর খাদ্যনালী, শ্বাসনালী আর দুইপাশে থাকা দুটি নালী কেটে দেওয়া হয়। এ নালীগুলো কাটা হয়ে গেলেই পশু জবাই বিশুদ্ধ হয়ে যায়। অনেকেই গরু জবাই করতে গিয়ে ছুরি চালানোর পর ছুরির ধারালো বা সুঁচালো মাথা দিয়ে খোঁচাখুঁচি করেন, মেরুদণ্ডের সঙ্গে ঘাড় পর্যন্ত যে স্পাইনাল কর্ড রয়েছে, সেটির রগ কাটার জন্য চেষ্টা করেন। এ ধরনের খোঁচাখুঁচি কোনোক্রমেই উচিত নয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে এভাবে খোঁচাখুঁচির ফলে পশুটি মৃত্যুর আগেই একবার হার্টফেল করে। এটি অনাকাঙ্ক্ষিত। পশুর প্রাণ বের হওয়ার আগে চামড়া ছাড়ানো যাবে না। (জাওয়াহিরুল ফিকহ : ২/২৭৩)।

কোরবানির দোয়া:
কোরবানির পশুকে জবাইয়ের উদ্দেশ্যে কিবলামুখী করে শোয়ানোর পর নিচের দোয়াটি পড়তে হয়-ইন্নি ওয়াঝঝাহতু ওয়াঝহিয়া লিল্লাজি ফাতারাস সামাওয়াতি ওয়াল আরদা হানিফাও ওয়া মা আনা মিনাল মুশরিকিন। ইন্না সালাতি ওয়া নুসুকি ওয়া মাহইয়া ওয়া মামাতি লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন। লা শারিকা লাহু ওয়া বি-জালিকা উমিরতু ওয়া আনা মিনাল মুসলিমিন। আল্লাহুম্মা মিনকা ও লাকা বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার।
কোরবানির পশু জবাই করার পর এই দোয়া পড়তে হবে- আল্লাহুম্মা তাকাব্বালহু মিন্নি কামা তাকাব্বালতা মিন হাবিবিকা মুহাম্মাদিও ওয়া খালিলিকা ইবরাহিমা আলাইহিমাস সালাতা ওয়াস সালাম।

কোরবানির গোশত বন্টনের নিয়ম:
আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুরবানির গোশত একভাগ নিজের পরিবারকে খাওয়াতেন, একভাগ গরীব প্রতিবেশীদের দিতেন এবং একভাগ গরিব-মিসকিনদের দিতেন।ইসলামের বিভিন্ন ইমামগণও কুরবানির গোশতকে তিনভাগ করাকে মুস্তাহাব বলে উল্লেখ করেছেন।কিন্তু কোরবানির গোস্ত বন্টনের ক্ষেত্রে এটি শর্ত নয়।

সঠিক নিয়ম পালন করে আল্লাহ আমাদেরকে কুরবানী করার তাওফিক দান করুন। আমিন

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
এই ওয়েবসাইটের লেখা ও ছবি অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Theme Customized BY WooHostBD